তারাবির নামাজের নিয়ম | রোজার নিয়ত সমূহ দোয়া
পবিত্র রমজান মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ সিয়াম সাধনার মাস। রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। পড়লে সওয়াব হবে, না পড়লে গুণাহ হবে। একটি কথা মনে রাখবেন, সকল ইবাদতের মূল হচ্ছে নামাজ। নামাজ ছাড়া কোন ইবাদতই কবুল হয় না। তারাবির নামাজের নিয়ম জেনে নিন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজাগুলো ফরজ করেছেন। এমনকি এর রাতে তারাবি নামাজের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এক নজরে সম্পূর্ণ পোস্ট
তারাবির নামজের নিয়ম
রাসূল (সাঃ) তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে তিন রাত্রি তারাবীহ আদায় করেছেন। উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় পরেরদিন তিনি আর জামাতের সাথে তারাবীহ আদায় করেননি।
মুসলমানগন আবু বকর (রা:) এর খেলাফত কাল ও উমর (রা:) এর খেলাফতের প্রথম দিকে এ অবস্থায়ই ছিল। এরপর আমীরুল মুমিনীন উমর (রা:) প্রখ্যাত সাহাবী তামীম আদদারী (রা:) ও উবাই ইবনে কাআব (রা:) এর ইমামতিতে তারাবীর জামাতের ব্যবস্থা করেন। যা আজ পর্যন্ত কায়েম আছে। আলহামদুলিল্লাহ! এ তারাবীর জামাত শুধু রমজান মাসেই সুন্নাত।
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন
রমজান মাসের তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন। যে ব্যক্তি ইমান ও আত্ম বিশ্বাসের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন।
এমনকি তারাবির নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন। তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।(বুখারি ও মুসলিম)। তাই জেনে নিন তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন।
সূরা তারাবির বিধান সমূহ
২০ রাকায়াত তারাবীহ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবীহ-এর নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়াহ। এতে সকল রাকায়াতে সূরা মিলানো ওয়াজিব।
এর সুন্নতী পদ্ধতি হলো: ২০ রাকায়াত তারাবীহ নামাযে সূরা ফীল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত ১০ খানা সূরা দু’বার খতম করা অর্থাৎ সূরা তারাবীহ খাছ সুন্নতে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
চার রাকাত তারাবির নামাজের পর কোন দোয়া পড়তে হয়?
তারাবির নামজের চার রাকাত পর নিম্নে দোয়াটি পড়তে হয়।
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح.
*উচ্চারণ : ‘সুবহানাজিল মুলকি ওয়ালমালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়ালহাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি; সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানুমু ওয়া লা ইয়ামুতু, সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাববুনা ওয়া রাব্বুন মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’
*অর্থ : আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব। কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক। ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।
প্রতিটি সুস্থ এবং সাবালোক মুসলমানের জন্য রমজানে রোজা পালন বাধ্যতামূলক।পবিত্র কোরআনে রোজা রাখার ব্যাপারে বলা হয়েছে- তোমাদের মধ্যে যারা এই রমজান মাস পাবে,
সে যেন এ মাসে রোজা রাখে।
তারাবির নামাজ কত রাকাত?
মুসললমানদের মাঝে তারাবির নামাজ নিয়ে অনেক বিতর্ক। কেউ বলে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত। আবার কেউ বলে ১০ রাকাত।আবার অধিকাংশ লোক বলে ২০ রাকাত। এই তারাবির নামাজ নিয়ে মুসলমানদের মাঝে অনেক ঝগরা এবং বিতর্ক রয়েছে।
আসলে তারাবির নির্দিষ্ট কোনো রাকাতের কথা বলা হয়নি। দুই রাকাত করে ৮ রাকাত, ১০ রাকাত, ১২ রাকাত, ১৬ রাকাত, ২০ রাকাত পড়া যায়। কত রাকাত হবে, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি। তাই তারাবির নামাজের নিয়ম জেনে নিন।
রাসুলুল্লাহ (স)ইন্তেকাল এর পর, অধিকাংশ সাহাবী এবং সাহাবায়ে কেরামরা তারাবির নামাজ ২০ রাকাত করে পড়তেন। তাই তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়াই ভালো।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
তারবির নামাজের নিয়ম সমূহ
এশার সুন্নাত এবং ফরজ ৪ রাকাত এর পর। সুন্নাত ২ রাকাত পড়ে তারাবির নামাজ শুরু করবো। ২ রাকাত করে ২০ রাকাত পড়বে।তার পর এশার ভিতির এর নামাজ ৩ রাকাত পড়বে। তার পর এশার নফল ২ রাকাত। তারাবির নামাজের নিয়ম জেনে নিন।
তারাবির নামাজের আরবি নিয়ত সমূহ
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার বাংলা নিয়ত
বাংলা নিয়তঃ
হে আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের রমজান শরীফ-এর ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন।
নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞাত। অনেকে রোজার নিয়ত আরবিতে পারে না। বাংলা উচ্চারণ করে রোজার নিয়ত করলে নিয়ত হয়ে যাবে। কবুুুল করার মালিক আল্লাহ।
ইফতারের আরবিতে দোয়া
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
ইফতারের বাংলা দোয়া
হে আল্লাহ তায়ালা আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমাজানের ফরয রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনেই রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার আরম্ভ করছি। তারপর বিসমিল্লাহি ওয়া’আলা বারাকাতিল্লাহ বলে ইফতার করা।
তারাবির নামাজের মুনাজাত
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
বাংলা উচ্চারণ:আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নারি ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারি বিরাহমাতিকা ইয়া আজীজু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু ,ইয়া জাব্বারু ইয়া খালেকু, ইয়া রাররূ, আল্লাহুমা আজির না মিনান্নারি, ইয়া মূজিরু ইয়া মুজিরু, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
সর্বশেষ কথা, প্রত্যক মুসলমানদের জানা উচিত। তারাবির নামাজের নিয়ম, আরো কিছু জানতে আমাদের সাইটে ভিজিট করুন।