ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার নিয়ম ২০২২ |ফেসবুক প্রোটেক্ট কি?
বর্তমানে যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফেসবুক একাউন্ট খোলে থাকে। আর দিন দিন ফেসবুকের প্রয়োজনীয়তা আর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার অনেকে একাধিক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে থাকে। তাই আপনার ফেসবুক নিরাপত্তার জন্য ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করুন। তাহলে জেনে নিন “ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার নিয়ম”।
বর্তমান সময় ফেসবুক কোম্পানি থেকে একটি ম্যাসেজ আসছে। ম্যাসেজ এ লেখা আছে, আপনি আপনার ফেসবুকের তিনটি অপশন চালু রাখতে হবে। যদি চালু না রাখেন, তাহলে ২৮ তারিখের পর আপনার ফেসবুক একাউন্ট লক করে দিতে পারে।
এক নজরে সম্পূর্ণ পোস্ট
ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার নিয়ম
আপনার ফেসবুক যাতে হ্যাক না হয়, সেই জন্য ফেসবুক কোম্পানি এমন একটা আইডিয়া বের করেছেন। বর্তমান সময় অনেকের আইডি হ্যাক হয়ে থাকে, অনেকে আইডি হ্যাক হয়ে বিপদে পড়ে থাকে। প্রতিদিনি হ্যাকাররা কারো না কারো ফেসবুক হ্যাক করে থাকে, আর তাদের সাথে পতারনা করে থাকে।
তাই আপনি যদি আপনার ফেসবুকে সেটিংস অপশনে তিনটি জিনিস চালু রাখেন। আপনার ফেসবুক হ্যাক হওয়া থেকে নিরাপত্তা পাবে। তাহলে ফেসবুক আইডি নিরাপদে রাখার জন্য ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করুন।
ফেসবুক প্রোটেক্ট কি? / ফেসবুক প্রোটেক্ট কেনো চালু করবেন?
Facebook প্রোটেক্ট টা মূলত আসলে কি? এই প্রশ্নটা সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে ফেসবুক প্রোটেক্ট টা হল আপনার ফেসবুক একাউন্ট কে প্রোটেক্ট করার অর্থাৎ নিরাপদ রাখার জন্য। এটা ফেসবুকের একটি ফিচার যেটাকে সকল ইউজারদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। এর মানে ফেসবুক প্রোটেক্ট টা আগেও ফেইসবুকে ছিলো, কিন্তু বাধ্যতামূলক ছিলো না।
সম্প্রতি প্রচুর পরিমান ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এটাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। যাতে করে সবাই সবার একাউন্ট নিরাপদে রাখতে পারে। এছাড়া ফেসবুক প্রোটেক্ট এর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো প্রথমে জানা যাক এর সুবিধাগুলো !
ফেসবুক প্রোটেক্ট এর সুবিধা
- fb প্রোটেক্ট এর প্রথম যে সুবিধা আপনি পাবেন, সেটা হলো আপনার একাউন্ট এর সম্পুর্ণ আপনার অধীনে থাকবে । অর্থাৎ কোনো থার্ড পার্টি বা কেউ আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পেলেও আপনার অনুমতি ব্যাতিত সে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে আপনার একাউন্ট টি হ্যাক হওয়া থেকেও রক্ষা পাবে।
2. আপনার আইডি আগের তুলনায় স্ট্রং হবে। অর্থাৎ স্প্যামার্সদের ফেইক রিপোর্টে আপনার একাউন্ট নস্ট বা ডিজেবল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। অর্থাৎ আপনার একাউন্ট আগের তুলনায় সেইফ থাকবে।
আরো পড়ুনঃ
ফেসবুক পাসওয়ার্ড রিসেট করার নিয়ম
ফেসবুক একাউন্ট ডিলেট করার নিয়ম
3. এছাড়া আরো একটি মজাদার সুবিধা হলো। নরমালি আপনি যদি আপনার ফেইসবুক একাউন্ট পাঁচটি ডিভাইসের বেশী ডিভাইসে লগ ইন করেন। তাহলে আপনার একাউন্ট লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আপনি যদি ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করে নেন ,তাহলে সহজেই আপনি যতগুলো ইচ্ছে ততগুলো ডিভাইসেই লগ ইন করতে পারবেন। এতে আপনার একাউন্ট লগ ইন এপ্রুভাল বা ফেসবুক থেকে কোনো প্রকার আইডেন্টিটি কনফার্মেশন চাইবে না।
ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার পদ্ধতি
নম্বরের ক্ষেত্রে আমার দেওয়া স্ক্রীনশট গুলো ফলো করুন। প্রথমে আপনাকে ফেসবুকের একদম উপরের ডান কর্ণারের তিনটি ডট এর উপর ক্লীক করতে হবে।
এরপর স্ক্রল ডাউন করে একদম নিচে সেটিং এ চলে যাবেন। সেটিং এ যাওয়ার পর আপনার সামনে অনেকগুলো সেটিংস আসবে, আপনাকে সিম্পলি পাসওয়ার্ড এন্ড সিকিউরিটি (Password and Security) তে ক্লীক করতে হবে।
ক্লিক করার পর আপনি প্রথমে দেখতে পাবেন, check your infortentnt security setting এটাই ক্লিক করুন।
তারপর আপনি দেখতে পাবেন তিনটি অপশন, এই তিনটি অপশন আপনাকে চালু করতে হবে। চালু করলে এই তিনটি অপশন সবুজ হয়ে যাবে। মূলত এটাই ফেসবুক প্রোটেক্ট। আমার দেওয়া স্কিনসটের তিনটি অপশন সবুজ করা আছে। এর কারন হলো আমি তিনটি অপশন চালু করে রাখছি।
যাই হোক নিচে এই তিনটি ধাপ কিভাবে চালু করবেন, এর বিবারণ নিচে দিয়েছে। তাহলে আপনি আপনার ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করে নিন।
ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার নিয়ম
প্রথম স্টেপঃ ফেসবুক পাসওয়ার্ড
১. প্রথমে আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলে, আপনার রিয়েল একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড টি শক্তিশালি করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যেকোনো রেন্ডম পাসওয়ার্ড ইউজ করতে পারেন। যেমন আপনার নাম যদি ইসমাইল হয় তাহলে আপনি দিতে পারেন iSM@il563 এরকম। অবশ্যই আমি যেভাবে দিয়েছি সেভাবে দেবেন না। নিজের মতো করে পছন্দ করবেন পাসওয়ার্ড।
২. এমন পাসওয়ার্ড পছন্দ করবেন না যেটা আপনি ভূলে যাবেন, সুবিধা হয় যদি সিক্রেট কোথাও পাসওয়ার্ড টি লিখে রাখেন। পার্সোনালি আমি নিজেও আমার পাসওয়ার্ড আমার সিক্রেট ডায়রি তে লিখে রেখেছি। এতে করে পাসওয়ার্ড ভূলে গেলেও খুব একটা সমস্যা হয় না।
৩. কোনো প্রিয় মানুষের নাম, মোবাইল নম্বর কিংবা 12345…. এরকম পাসওয়ার্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এরকম পাসওয়ার্ড কে ফেসবুক দুর্বল পাসওয়ার্ড হিসেবে গণ্য করে। যার কারনে আপনার ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু হবে না।
Facebook protect চালু করার পদ্ধতি
দ্বিতীয় স্টেপঃ two-factor authentication
এই স্টেপ এ আপনাকে টু স্টেপ অথেনটিকেশন চালু করে নিতে হবে। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ভ্যালিড ফোন নম্বরের যেখানে আপনি লগ ইন এপ্রুভাল কোড পাবেন। অথবা দরকার পড়বে গুগল অথেনটিকেশন এপস এর।
একটু নিচে স্ক্রল করলেই আমরা পেয়ে যাবো ইউজ টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (Use Two-Factor Authentication) সেটা তে ক্লীক করুন।
এবার টার্ন অন দেখাবে (Turn On) এ ক্লীক করুন।
এরপর নিচে অপশন পাবেন মোবাইল নম্বর অপশন অথবা অথেনটিকেশন এপ অপশন। আপনাকে সিম্প্ললি নম্বর অপশনের উপর ক্লীক করতে হবে। এরপর আপনার কাছে নম্বর চাইবে, সেখানে আপনার ফোন নম্বর টি দিন।
ফোন নম্বর দেওয়ার পর ফেসবুক এসএমএস এর মাধ্যমে আপনার নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড সেন্ড করবে। আপনার ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে কোড টি কপি করে নিন, এরপর কোডটি ফেসবুক এ গিয়ে ভেরিফিকেশন কোড স্পেসে বসিয়ে দিয়ে কন্টিনিউ তে দিন। ব্যাস চালু হয়ে গেলো আপনার টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন।
তৃতীয় স্টেপঃ লগইন এলার্ট
এখন থেকে আপনি যেকোনো ডিভাইসে আপনার আইডি লগ ইন করতে গেলে, ফেসবুক আপনার নম্বরে একটি অথেনটিকেশন কোড পাঠাবে। সেই কোড ছাড়া কেউ ই আপনার আইডি লগ ইন করতে পারবে না। তাহলে লগইন এলার্ট চালু করে নিন।
এখন আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যদি আপনার নম্বর হাতের কাছে না থাকে, বা আপনার ফোনে যদি চার্জ না থাকে। তাহলে কীভাবে লগ ইন করবেন? কোন চিন্তা নেই সেটার ও সহজ সমাধান আছে। পোস্টের শেষে আমি সেটা নিয়ে আলোচনা করবো।
ফেসবুকে ট্রাস্টেড কন্টাক্ট এড করার নিয়ম
তিননম্বর স্টেপ টি হলো আপনার একাউন্টে ট্রাস্টেড কন্টাক্ট এড করা। অনেকেই এই ফিচার টা কে এভয়েড করেন। কিন্তু এটা খুব ই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন আপনার একাউন্ট টি লক হয় অথবা হ্যাক হয়ে যায়। তখন ট্রাস্টেড কন্টাক্ট এর সাথে আপনার একাউন্ট খুব সহজেই আপনি ব্যাক করাতে পারবেন।
যাইহোক, ট্রাস্টেড কন্টাক্ট এড করার জন্য আপনাকে সেটিংস থেকে চলে যেতে হবে পাসওয়ার্ড এন্ড সিকিউরিটি তে। নিচে স্ক্রল ডাউন করলে পেয়ে যাবেন (Get 3 to 5 Friends to Contact if you get locked out.) এটাতে ক্লীক করুন। আপনার পছন্দমতো তিনজন বা ৫ জন ট্রাস্টেড বন্ধুকে সেখানে এড করুন। এরা আপনার একাউন্ট লক হলে আপনাকে হেল্প করে আপনার একাউন্ট ব্যাক করে দিতে পারবে। তবে সাবধান কারন আপনার ট্রাস্টেড কন্টাক্ট চাইলে আপনার একাউন্ট এর ক্ষতি ও করতে পারে।
two-factor authentication চালু করার নিয়ম
এবার চলুন জানা যাক নম্বর ছাড়া গুগল অথেনটিকেশন এপ এর মাধ্যমে কীভাবে আপনি two-factor authentication চালু করবেন।
* এর জন্য প্রথমে আপনাকে প্লে স্টোর বা এপল স্টোর থেকে, গুগল অথেনটিকেশন এপ টি আপনার ডিভাইসে ইন্স্টল করে নিতে হবে। এরপর আপনাকে ফেসবুকে যেতে হবে। আগের মতো Use two-factor authentication এ চলে যান। টার্ন অন করুন এবং অথেনটিকেশন এপ সিলেক্ট করুন।
অথেনটিকেশন এপ সিলেক্ট করার পর ফেসবুক আপনাকে একটি QR কোড দিবে। আপনার QR কোড এর প্রয়োজন নেই। যেটা করতে হবে সেটা হলো QR কোড এর নিচে একটি কোড পাবেন স্ক্রীনশটের মতো সেটাতে ট্যাপ করুন। এবার কন্টিনিউ তে ক্লীক করুন দেখবেন ফেসবুক আপনার কাছে একটি কোড চাইবে। হোম বাটন প্রেস করে ফেসবুক থেকে বের হয়ে আসুন।
টু ফেক্টর অথেনটিকেশন চালু করার পদ্ধতি
এখন অথেনটিকেশন এপটি ওপেন করুন, সেখানে একটি (+) আইকন পাবেন সেটাতে ক্লীক করুন। (গুগল অথেনটিকেশন এপ থেকে স্ক্রীনশট নেওয়ার পারমিশ দেয় না। তাই আমি স্ক্রীনশট দিতে পারি নি তার জন্য দুঃখিত)। যাইহোক, (+) আইকনে ক্লীক করার পর (Enter a setup key) তে ক্লীক করুন। উপরে আপনার ফেসবুক আইডির নাম সিলেক্ট করে, আপনার আগে থেকে কপি করা কোড টি নিচে পেস্ট করুন এবং এরপর এড এ ক্লীক করুন।
এবার অথেনটিকেশন এপটি আপনাকে প্রতি ২০ সেকেন্ড পর পর কোড দিবে। যে কোড টি রানিং থাকবে সেটা ফেসবুকের ভেরিফিকেশন স্পেসে বসিয়ে কন্টিনিউ দিন।
ব্যাস হয়ে গেলো আপনার অথেনটিকেশন এপ সেটআপ।
আরো পড়ুনঃ
ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার নিয়ম
ছেলে ও মেয়েদের ফেসবুক আইডির নাম
মোবাইল নম্বর অথবা মোবাইল হাতের কাছে না থাকলে কি করবো?
তিনটি স্টেপ শেষ করলাম, আশা করি আপনাদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় নি। চলুন এবার জানা যাক আপনার মোবাইল নম্বর বা অথেনটিকেশন এপ আপনার হাতের কাছে না থাকলে আপনার একাউন্ট টি অন্য কোনো ডিভাইসে কীভাবে লগ ইন করবেন।
এরজন্য আপনাকে চলে যেতে হবে (Use two-factor authentication) এ সেখানে গেলে, Recover Codes নামে একটি অপশন পাবেন সেখানে ক্লীক করুন। (Show Code) এ ক্লীক করুন। তাহলে আপনি ১০ টি রিকোভার কোড পাবেন, যেগুলো আপনি কোথাও নোট করে রাখতে পারেন। যখন আপনার হাতের কাছে ফোন বা নম্বর থাকবে না। তখন এই কোডগুলো ব্যাবহার করে আপনি আইডিতে লগ ইন করতে পারবেন।
রিকোভার কোড যদি অন্য কেউ দেখে ফেলে তাহলে করণীয় কি
১০ টি কোড ব্যবহার হয়ে গেলে আপনি রিকোভার কোড এ গিয়ে উপরে ডান পাশে (Get New Codes) দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লীক করলে নতুন কোড পাবেন। তবে আপনার রিকোভার কোড কেউ দেখে ফেল্লে আপনি তাৎখনাত গেট নিউ কোড দিয়ে নতুন কোড নিয়ে নিলে আগের কোড আর কাজ করবে না।
শেষকথা-
আশা করি সবকিছু এখন আপনাদের কাছে পরিষ্কার। তাহলে আপনাদের ফেসবুক প্রোটেক্ট চালু করার নিয়ম বুঝাতে পারলাম। তবুও কারো কোথাও কোনো সমস্যা হলে কমেন্টের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারেন। আমি আপনাদের কমেন্টের রিপ্লে দেওয়ার চেস্টা করবো। ধন্যবাদ।