রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি | এবং প্রয়োজনীয়তা
পৃথিবীর প্রত্যকটা মানুষের শরীরের রক্ত আছে। রক্ত নেই কারো শরীরে এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। হয়তো কারো শরীরের কম বা বেশি আছে এটা স্বাভাবিক। রক্ত একধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ আন্তঃকোষীয় লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী তরল যোজক কলা। রক্তের গ্রুপ সব মানুষের জানা প্রয়োজন। তাই রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি লিখলাম।
রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক লৌহ ঘটিত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকায় রক্তের রং লাল হয়। বিভিন্ন শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার ফলে রক্তের পরিমান বৃদ্ধি করে থাকে। আবার দেখা যায় তাদের শরীর অনুযায়ী রক্তের পরিমান কম। এর কারনে তাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়।
এক নজরে সম্পূর্ণ পোস্ট
রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন সুস্থ স্বাভাবিক লোকের ৬ লিটার রক্ত যথেষ্ট। একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। যা মানুষের দেহের ওজনের শতকরা ৮ ভাগ। প্রত্যেক মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা অতি জরুরি। রক্ত মানুষের শরীর একটি প্রধানত অংশ।
জীবনের তাগিদে আমরা প্রতিদিন কত কাজ করি থাকি। এতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের বিপদ আসে। অনেকে দেখা যায় গাড়ি চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হয়েছে, অনেক রক্ত ঝরে পড়ে গেলো। তখন তাকে বাঁচানোর জন্য রক্তের খুবই প্রয়োজন হয়। এই রকম প্রতিদিনিই মানুষ বিভিন্ন কারনে বিপদে পরে থাকে। রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি জেনে রাখুন।
রক্তে গ্রুপ নির্ণয় করার নিয়ম
বিপদের সময় রক্তের খুবই প্রয়োজন হয়। আবার দেখা যায় খুব বিপদের সময় রক্ত মেনেজ করা যায় না, অথবা রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী রক্ত পাওয়া যায় না। তখন রক্তের অভাবে রুগিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
রক্তের অভাবে অনেক রুগি মারা যায়। তাই বলি রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি জেনে রাখা ভালো। রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা ভালো। কখন কার জন্য রক্ত প্রয়োজন হবে, কেউ জানে না। কাজেই রক্তের গ্রুপ জানা খুবই প্রয়োজন মনে করি।
রক্তের গ্রুপ নির্নয় করার পদ্ধতি
আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান হচ্ছে রক্ত। শরীরের মোট ওজনের শতকরা ৭ ভাগ রক্ত থাকে। আর সেই রক্তের শতকরা ৯৩ থাকে জলীয় পদার্থ দ্বারা তৈরি।
প্রতিটি জীবিত মানুষ জন্মগত সূত্রে শরীরে রক্ত নিয়ে জন্মায়। বিজ্ঞানীরা রক্তের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের বিচারে রক্তকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। রক্তের এই শ্রেণিবিন্যাসকে ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।
রক্তের গ্রুপ নির্নয় করার পদ্ধতি
জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার প্রথম মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করেন। এই শ্রেণীবিন্যাসকে সংক্ষেপে ABO ব্লাড গ্রুপ বা সংক্ষেপে ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।
রক্তের গ্রুপ বিচারের ক্ষেত্রে এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজেন বিশেষ ভূমিকা রাখে।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা
মানুষের জীবনে, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে, হঠাৎ একজন মৃত্যুমুখী মানুষকে রক্তদিয়ে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। আমাদের জীবনে অনেক দুর্ঘটনায় মানুষ রক্তের অভাবে মারা যায়। তাই একজনের শরীর হতে, অন্যজনের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহতের অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হয়, তখন রক্তের খুব প্রয়োজন হয়। বর্তমান সময় সন্তান জন্ম দানকালে বেশির ভাগ সিজার করতে হয়। আর সিজার রোগির জন্য রক্ত প্রয়োজন হয় থাকে। অনেক সিজার রুগি রক্তের অভাবে মারা যায়।
মেয়েলি রোগ লিউকোমিয়া, ক্যান্সার, অপারেশনের সময় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রকম বিভিন্ন কারনে রক্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে একজন মানুষ অনায়াসে রক্তদান করতে পারে। রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি জেনে রাখুন।
কতদিন পর রক্ত দেওয়া ভালো?
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ জানে না, কত দিন বা মাস পর রক্ত দিতে পারে। এমনকি কত বছর হলে, রক্ত দিতে পারবে। যাইহোক বড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি লোক রক্ত দান করলে সমস্যা নাই। যদি শরীর সুস্থ থাকে তাহলে দিতে পারবে। আর ১৮ বছরের কম বয়সি লোক রক্ত না দেওয়াটা ভালো।
একজন সুস্থ সবল পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি চার মাস পর পর রক্ত দিতে পারেন। এতে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। আবার রক্ত পরীক্ষা বা গ্রুপ না জেনে রক্ত গ্রহণ করা যাবে না।
কোন ধরনের মানুষের রক্ত গ্রহণ করা যাবে না?
মারাত্মক সংক্রামক রোগীর রক্ত গ্রহণ করা যাবে না।
মারাত্মক কোনো রুগি হলে তার রক্ত গ্রহণ করা ঠিক নয়। যেমন –
এইডস
সিফিলিস
যক্ষ্মা
হেপাটাইটিস বি ইত্যাদি।
তবে মনে রাখবেন কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রক্ত দেওয়া বা নেওয়া কোনোটাই করা যাবে না।
রক্ত কি?
শরীরের ব্লাড বা রক্ত একধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ আন্তঃকোষীয় লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী তরল যোজক কলা। রক্তের রং লালা।
রক্তের রং লাল কেনো হয়?
বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার ফলে রক্ত বৃদ্ধি হতে থাকে। রক্ত কেনো লাল হয় তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক লৌহ ঘটিত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকায় রক্তের রং লাল হয়
রক্ত কত প্রকার
মানুষের শরীরের রক্তের উপাদান দুই প্রকার। এই দুই প্রকার রক্ত সকল মানুষের জানা প্রয়োজন। নিম্নে প্রকার গুলো দেওয়া হলো-
১. রক্ত রস
২. রক্ত কণিকা।
আরো পড়ুনঃ
মেছতা দূর করার উপায়
মেয়েদের ত্বক ফর্সা এবং মুখ সুন্দর করার উপায়
রক্ত কণিকা কত প্রকার?
শরীরের ব্লাড বা রক্ত কণিকা তিন প্রকার। রক্তের প্রকার গুলো সবাইর জানা খুবই প্রয়োজন। কারণ রক্ত হচ্ছে শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১. লোহিত রক্ত কণিকা
২. শ্বেত রক্ত কণিকা
৩. অনুচক্রিকা।
লোহিত রক্ত কণিকার প্লাজমা পর্দার বাইরে থাকে এন্টিজেন আর রক্তরসে থাকে এন্টিবডি। কোন মানুষের লোহিত রক্ত কণিকায় যদি অ এন্টিজেন থাকে তাহলে তার রক্তের গ্রুপ হবে অ। ই এটিজেন থাকলে তার রক্তের গ্রুপ ই।
অই উভয় এন্টিজেন একসাথে থাকলে তার গ্রুপ হবে অই এবং অই কোনটাই না থাকলে তার রক্তের গ্রুপ হবে ঙ। এই এন্টিজেনগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে মা বাবার নিকট থেকে সন্তানরা পেয়ে থাকে। এই রক্তের গ্রুপের ওপর নির্ভর করেই কে কাকে রক্ত দিতে পারবে বা নিতে পারবে তা নির্ভর করে।
রক্ত কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
মানব দেহের রক্তের এন্টিজেনকে অ ও ই নামে নামকরণ করা হয়। রক্তের এন্টিজেনের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে সমগ্র মানব জাতির রক্তকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
এগুলো হলো অ, ই, অই ও ঙ।
জয ফ্যাক্টর বলতে কি বুঝায়?
রক্তের আরেকটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বা গ্রুপ হলো জয ফ্যাক্টর। জয ফ্যাক্টর সম্পর্কে সকল মানুষের জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে অনেক ছেলে মেয়ে বিয়ে করে ফেলে, ফলে সন্তান জন্মের সময় অনেক বিপদে পড়তে হয়।
বিয়ের পূর্বে অবশ্যই বর ও কনের জয ফ্যাক্টর পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে। জয ফ্যাক্টর না জানার কারনে সন্তান নেওয়ার সময় বড় সমস্যা হতে পারে। ১৯৪০ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ও উইনার নামক দুইজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম রেসাস নামক বানরের লোহিত রক্ত কণিকায় অস্থিত একধরনের এন্টিজেন আবিষ্কার করেন। এই রেসাস বানরের নাম অনুসারে এ এন্টিজেনকে রেসার্স ফ্যাক্টর বা জয ফ্যাক্টর বলে। রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি জেনে রাখুন।
জয ফ্যাক্টরের উপস্থিতির ভিত্তিতে রক্ত দুই প্রকার। জয পজেটিভ বা জয+ এবং জয নেগেটিভ বা জয – । যাদের রক্তে জয এন্টিজেন থাকে তাদের গ্রুপকে পজিটিভ এবং জয এন্টিজেন না থাকলে এ গ্রুপকে বলা হয় জয নেগেটিভ।
ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় করার পদ্ধতি
গ্রুপ নির্ণয় করার উপকরণঃ
১। ব্লাড গ্রুপিংয়ের ৩ টা এন্টি-
(1) Anti-A
(2) Anti-B
(3) Anti-D
২। জীবাণুমুক্ত একটা সুচ
৩। একটা কাঁচের স্লাইড
৪। তুলা
৫। জীবানুনাশক
রক্তের গ্রুপ নির্নয় করার নিয়ম
প্রথমে যার ব্লাড গ্রুপ নির্বাচন করবেন তার হাতের যেকোনো একটা আঙুল ভালো করে জীবাণুমুক্ত করে নিবেন। এরপর সুচ দিয়ে আঙুল এর আগায় হাল্কা খোঁচা দিয়ে কাঁচের স্লাইডে ৩ ফোটা রক্ত নিবেন ছবিতে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী দুরত্ব রেখে।তারপর-
১ম ফোঁটায় এন্টি-A
২য় ফোঁটায় এন্টি-B
৩য় ফোঁটায় এন্টি-D
দিয়ে ভাল করে সুচ এর গোড়া দিয়ে মেশাবেন।খেয়াল রাখবেন রক্ত এবং এন্টি মেশানোর সময় একটা যেনো অন্যটার সাথে না মিশে।
ব্লাড গ্রুপিংয়ের এর নিয়ম
১। যদি Anti -A ফাটে আর Anti-B না ফাটে তাহলে রক্তের গ্রুপ A।
২। যদি Anti-A না ফাটে আর Anti -B ফাটে তাহলে রক্তের গ্রুপ B।
৩। যদি Anti- A এবং Anti-B দুইটাই ফাটে তাহলে রক্তের গ্রুপ AB।
৪। যদি Anti-A ও Anti-B একটাও না ফাটে তাহলে রক্তের গ্রুপ O।
positive আর negative নির্বাচন-
১।Anti-D…….. যদি ফাটে তাহলে রক্ত +(positive)।
২।Anti-D……… যদি না ফাটে তাহলে রক্ত —(negative)
আরো পড়ুনঃ
রাতে দেরি করে ঘুমালে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়
ঔষধের দাম জানার উপায়
কোন গ্রুপের রক্ত কাকে দিতে পারবেন
নিছে একটি ছবির মাধ্যমে বিষয়টি বর্ননা করলাম। কোন গ্রুপের রক্ত কাকে দিতে পারবেন জেনে নিন।
রক্তদানের সাধারণ কিছু তথ্য
১. এক ব্যাগ রক্ত দিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না।
২. মানব দেহের রক্ত দানের ৫- ২১ দিনের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
৩. রক্ত দিলে হাড়ের বোনম্যারোতে নতুন রক্ত কণিকা তৈরিতে উদ্দীপনা আসে।
৪. ব্যবহৃত সূচ সিরিঞ্জ জীবাণু মুক্ত কি না জেনে নিন।
৫. খালি পেটে রক্ত দিবেন না।
৬. শরীরের রক্তদানের পুর্বে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জেনে নিন।
৭. পরিচিত ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে রক্ত দিন।
সর্বশেষ কথা
অনেকে রক্ত দিতে গিয়ে ভয় পায়। আবার অনেকে রক্ত দিতে চায় না, যদি তার রক্ত কমে যায়। আসলে এটা ভূল ধারনা। ডাক্তারদের মতে, রক্ত দেওয়া ভালো, যদি সুস্থ স্বাভাবিক শরীর ঠিক থাকে। যাই হোক রক্তের প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তের গ্রুপ নির্ণয় বা রক্তের সম্পর্কে অনেক কিছু লিখলাম।
যদি আমাদের আর্টিলেটি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই কমমেন্ট করে জানাবেন। আর আর্টিকেলটি সেয়ার করে আপনার বন্ধু বান্ধবীকে জানার জন্য সহায়তা করুন।