শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন | এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
শবে বরাতের রাতটি পরিচিত লাইলাতুল বরাতের পূন্যময় রাত। এই রাতে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা নফল নামাজ আদায় করে। কুরআন তিলাওয়াত সহ ইবাদত এর মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। এই রাতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। তাই শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে লিখলাম।
এই রাতে আল্লাহ তায়ালা সব কিছু নিয়ে হাজির হয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ তোমরা এই রাতে আমার কাছে কে কি চাও? আমি সব কিছু নিয়ে হাজির হয়ে আছি।তোমাদের দেওয়ার জন্য।
এক নজরে সম্পূর্ণ পোস্ট
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর জন্য, শবে বরাত হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই বরকত ময় রাতের ফজিলত মুসলিম উম্মাহর জন্য, আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া এক নেয়ামত।
বিশ্বের সকল মুসলিম জানে, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। তার উসিলায় আল্লাহ তায়ালা তাঁর গোলামকে বিশেষ কিছু দিবস দিয়েছেন। যার ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই নিছে সংক্ষিপ্ত ভাবে একটু আলাপ আলোচনা করলাম।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন
হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি। বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহান আল্লাহ এ রাতে বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।
মহিমান্বিত এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি। এমনকি পাপ এবং খারাপ কাজের জন্য ক্ষমা চায়। অনেকে চোখের পানি জরিয়ে অনুশোচনায়, মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আল্লাহ মহান, আল্লাহ সর্বশক্তিমান। শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন নিচে দেওয়া হলো।
শবে বরাত অর্থ কি?
শব শব্দের অর্থ হলো রাত/ রজনী। আর বরাত অর্থ হলো সৌভাগ্য। মুলত এই দুইটি শব্দ নিয়ে সবে বরাত। আর শবে বরাতের অর্থ হলো সৌভাগ্যের রাত।
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত?
বরাতের নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায়, তত বেশী ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তেই হবে। তার সাথে সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কম্পক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।
প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এই ভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
শবে বরাতের রাত্রে আল্লাহ ২ ধরনের লোকদের ক্ষমা করবেন না
শবে বরাতের আমল বা করনীয় সম্পর্কেে কিছু বিষয়
১.শবে বরাতের রাত্রিতে অনেক ভাবে ইবাদত করা যায়। যেমনঃ নামাজ, দুয়া, নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, দুরূদ শরীফ, ইত্যাদি এই গুলো করা ভালো।
২. শবে বরাতের পরের দিন তথা, ১৫ ই শাবান রোযা রাখা।
৩. এখন এই রাত্রে কবর যিয়ারত করা যেতে পারে।
৪. এই রাত্রে দীর্ঘ সিজদাহ্ রত হওয়ে আল্লাহকে ডাকা ভালো।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবিতে
অনেকে আরবীতে নিয়ত মুখাস্ত করতে চায়। কিন্তু আরবী পড়তে পারে না। তাই শবে বরাতের নামাজের নিয়ত, বাংলা উচ্চারণে লিখলাম। যাতে সহজে মুখাস্ত করা যায়।
নামাজের নিয়ত আরবীতে :
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তায়ালা রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
বাংলায় শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
অনেকে শবে বরাতের আরবীতে নিয়ত জানে না। তাই বাংলায় শবে বরাতের নিয়ত লিখলাম। বাংলায় নিয়ত করে নামাজ পড়তে পারবে।
বাংলায় নিয়ত:- আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দুই রাকায়াত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার।
শবে বরাতে ভালো কিছু খাওয়া যাবে?
এই বরাতের রাতকে কেন্দ্র করে। আমাদের দেশে বেশ কিছু কুসংস্কার ও বিদআত চালু আছে। তার মধ্যে অন্যতম বিদআত হল হালুয়া রুটি তৈরী করা। ইহা এক মহা ধুমধাম, যা নিঃসন্দেহে একটি কুসংস্কার ও বিদআত।
তাই এইটি বর্জন করা উচিত। অন্য দিকে কবরস্থানে মোমবাতি জ্বালিয়ে সেজদাহ করা একটি বিদআত। এবং কিছু মুসলমান এই রাত্রে মাজারে গিয়ে এই রাতটি মোমবাতি এবং হালুয়া রুটি নিয়ে কাটিয়ে দেয়। এই গুলো আসলে একটি বিদআত।
শবে বরাতের ইবাদত বাড়িতে করলে হবে?
কিছু মানুষ সারারাত জাগরন থাকে। এমনকি মসজিদে মসজিদে ঘোরাঘুরি করে। অল্প কিছু ইবাদত করে রাস্তায় রাস্তায় গল্প করে করে বেড়ায়। এই গুলো বর্জন করতে হবে।
সুতারং এই রাত্রে মসজিদে সমাবেত না হতে পারলে, বাড়ীতে গিয়ে নফল নামাজ পড়া ভালো।কুরআন তিলাওয়াত করতে পারো।বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের কবর যিয়ারত করতে পারো।
এই ছাড়া সকল নফল ইবাদত মসজিদের চাইতে বাড়ীতে পালন করা উত্তম। কেউ যদি সারারাত নফল ইবাদত করে গুমিয়ে পড়ে।এমন কি ফজরের নামাজ না পড়তে পারে! তার মতো দূর্ভাগ্য ব্যক্তি আর কে হতে পারে!
তাছাড়া এই মহামারী করোনা ভাইরাস এর কারনে। ইসলামী ফাউন্ডেশন বলেছেনঃ এই শবে বরাত রাত্ররে অনেক লোক এক সাথে ইবাদত করলে, করোনায় আক্রান্ত হতে পারে।
তাই বাড়ীতে নিজ ঘরে বসে শবে বরাত এর নফল ইবাদত করার জন্য বলেছেন। সবাই বেশি বেশি করে ঘরে নফল নামাজ পড়বে, এর উচল্লায় মহান আল্লাহ আমাদের করোনা থেকে মুক্তি করে দিতে পারে। আল্লাহ সর্ব শক্তিমান, আল্লাহ দয়ালু। আল্লগ চাইলে সব কিছু করতে পারে।
শবে বরাতের রাত্রে কার ইবাদত কবুল হবে না?
১. যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে যে কোনো প্রকারে শিরকে লিপ্ত থাকে।
২. যে ব্যক্তি কারো প্রতি লোভ, এবং কি হিংসা বিদ্বেষ পোষন কারী।
৩. যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকে।
৪. যে ব্যক্তি মদ পান কারি, এবং যে কোনো খারাপ নিশায় জড়িত।
৫. যে ব্যক্তি আত্ম হত্যার পোষন করে।
৬. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, এবং মা বাবার সাথে কথা বলে না।
৬. যে ব্যক্তি গনককারী, এমন কি গনকের কথা বলে মানুষকে ধোকা দিয়ে থাকে।
৭. যে ব্যক্তি মাতা পিতার অবাধ্য।
শবে বরাতের নামাজ ২০২২
প্রতিবছর শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে শবে বরাতের নামাজ পালিত হয়। পৃথিবীর সকল মুসলমানের কাছে শবে বরাতের নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত। সবাই শবে বরাতের নামাজ কে নফল নামাজ হিসেবে পালন করে থাকে। এবছর শবে বরাতের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ১৮ মার্চ রোজ শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর থেকে
শুক্রবার রাত্রে শবে বরাতের রাত। এই রাতে আল্লাহ শেষ আসমানে চলে আসে, মসুলমান বান্দাদের চাওয়া পাওয়া পূরণ করার জন্য। এই রাতে আল্লাহকে মন থেকে ডাকলে, আল্লাহ আপনার ডাকে ছাড়া দিবে। এই রাত ভাগ্য রজনির রাত।
শবে বরাতের রোজা কয়টি
আমাদের সমাজে মুসলিম ভাই বোনেরা শবে বরাতের রোজা রাখে ৩ টি। কেউ কেউ একটি, আবার কেউ কেউ দুইটি রাখে।
১৩ শাবান, ১৪ শাবান, ১৫ শাবান এই তিন দিন রোজা রাখা সুন্নাহ। আইয়ামে বীয এই তিন রোজা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আমাদেরকে।
শবে বরাতের নামাজের দোয়া
শবে বরাতের রাত্রে কি দোয়া পড়তে হবে, এমন কোনো সঠিক দোয়া পাওয়া যায় নাই। আপনি চাইলে যে কোনো দোয়া পড়তে পারেন। দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আপনি নফল নামাজ পড়তে পারেন। আপনার যত ইচ্ছে পড়তে পারেন। ক্লান্তি লাগলে আপনি জিগির ইস্তেগপার পড়তে পারেন।
কুরআন তেলোয়াত করতে পারেন। আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনুতি করে ক্ষমা চাইতে পারেন। আল্লাহর কাছে যে কোনো দোয়া পড়ে চাইতে পারেন। আল্লাহ আপনাকে খালি হাতে পিরিয়ে দিবে না।
বেতের নামাজের পর শবে বরাতের নামাজ পড়া যাবে কি
মাগরিব এর নামাজের পর থেকে, আপনি শবে বরাতের নফল ইবাদত করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, বেতর নামাজ পড়ার আগে আপনি শবে বরাতের বিভিন্ন আমল করে নিবেন। সবার শেষে বিতর নামাজ পড়বেন।
সারা রাত শবে বরাতের নফল ইবাদত করে, আপনি যদি ফজরের নামাজ পড়তে পারেন নাই। তাহলে আপনার ইবাদত গুলো কবুল না ও হতে পারে। তাই ফজরের নামাজ যেনো কাজা না হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
২০২২ সালে শবে বরাত কোন দিন?
অনেকে জানে না, শবে বরাত কোন দিন ২০২২ সালে। তাই গুগল ইউটুবে জানতে চেষ্টা করে। ২০২২ সালে মার্চ মাসের ১৮ তারিখ শুক্রবার দিবাগত রাত শবে বরাত।
সর্বশেষ কথা
শবে বরাতের রাত ভাগ্য রজনির রাত। আপনি মন থেকে আল্লাহর কাছে চাইলে, আল্লাহ আপনাকে খালি হাতে পিরিয়ে দিবেন না।
এই রকম ইসলামী আরো কিছু জানতে বিজিট করুন। আমাদের ওয়েবসাইটে বাংলা ব্লগার ডট ইনফো।
খুবই ভালো হয়ে হয়েছে