শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম | শবে মেরাজের বিবারণ
প্রিয় পাঠক বিন্দু সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। আশা করি তোমরা ভালো আছো, আমি ও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। আজ আমি গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্টিকেল নিয়ে আসলাম। আর সেই আর্টিকলেটি হলো, শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন। তাহলে জেনে নিন শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম ।
অনেক মুসলিম ভাই বোনেরা শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম কানুন জানে না। তাই তারা গুগলে সার্য করে থাকে, শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম কানুন জানার জন্য। আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিম ভাই বোনেরা শবে মেরাজ কি জানে না।
এক নজরে সম্পূর্ণ পোস্ট
শবে মেরাজের নামাজের নিয়ম
শবে মেরাজের নামাজ কত রাকাত, অনেক মুসলিম ভাই বোনেরা জানে না। তাই তারা গুগল বা ইউটুবে সার্য করতে থাকে। অনেকে সার্য করে ও সঠিক নিয়ম খুজে পায় না। চিন্তার কোনো কারণ নেই, আপনি আমার আর্টিকেলটি ধর্য্য সহকারে পড়ুন।
আশা করি আপনি খুব সহজে শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন জানতে পারবেন। এছাড়া ও শবে মেরাজের দিন কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে, এটা নিয়ে অনেকের মাঝে তর্কবির্তক হয়ে থাকে। আশা করি আমার আর্টিকেলে শবে মেরাজের নামাজ কত রাকাত, আপনি জানতে পারবেন।
শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম
রজব মাসে আইয়ামে বীজের রোজা ছাড়া অন্য কোনো রোজার কথা নবী করীম (স.) বলেননি। পাশাপাশি তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়া আর কোনো নফল নামাজের কথাও বলেননি। হাদিস শরীফে শবেবরাত ও শবে মেরাজের নামাজ বলে কোনো নামাজের কথা আসেনি।
রাসূলুল্লাহ (স.) শুধু বিশেষ কোনো রাত্রিতে নামাজ পড়তেন না, এবং বিশেষ কোন রাত্রিতে তা পড়ার জন্য তিনি কাউকে বলেননি। তবে রামাদান মাসে কিয়ামুললাইলের কথা এসেছে দুইভাবে।
প্রথমত সাধারণভাবে রামাদানে কিয়ামুল লাইলের কথা এসেছে। দ্বিতীয়ত লাইলাতুল কাদরে কিয়ামুল লাইলের কথা এসেছে।
কিন্তু অন্য কোনো বিশেষ রাত্রির বিশেষ কিয়ামের কথা কোনো হাদিসে আসেনি। এমনকি কদরের রাতে যে কিয়ামের কথা বলা হয়েছে. তার নামও কিন্তু কদরের রাতের নামাজ নয়। আর শবে মেরাজ ও শবে বরাতের নামাজের কথা তো বলাই বাহুল্য।
মেরাজ মানে কি?
মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন, ঊর্ধে আরোহণ, আরোহণের সিঁড়ি। যেহেতু হজরত মুহাম্মদ (স.) তার এক মহাকাশ ভ্রমণ সম্পর্কে এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এজন্য তার এই ভ্রমণকে মেরাজ বলা হয়। এ ভ্রমণ যেহেতু রাতের পর রাত অব্যাহত ছিল, সেজন্য একে ইসরাও বলা হয়।
কুরআনুল কারীমে এই শব্দটিই ব্যবহূত হয়েছে। নবুয়তের একাদশ ও দ্বাদশ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে, হিজরতের প্রায় বছর দেড়েক আগে। রজব মাসে রাসূল (স.)-এর মেরাজ সংঘটিত হয়। মহানবীর জীবনে সংঘটিত আশ্চর্যজনক বিষয়াবলির মধ্যে মেরাজ অন্যতম।
মহান আল্লাহ তার বন্ধুকে মক্কার মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা। এমনকি ঊর্ধ্বজগত্ পর্যন্ত স্বশরীরে, আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাদি দেখাবার জন্য ভ্রমণ করিয়েছিলেন। এই বিস্ময়কর ঘটনাটি পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা নাজমে উল্লেখ রয়েছে এবং অসংখ্য হাদিসে মেরাজের ঘটনা বর্ণিত আছে।
কুরআন শরীফের সূরা বাণী ইসরাঈল এর প্রথম আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি আস্রা বিআবদিহি লাইলাম মিনাল মাসিজদিল হারামী ইলাল মাসিজদিল আকসা
অর্থ: পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি তাহার এক বান্দা (মুহাম্মদ)-কে মসজিদে হারাম (কাবাঘর) হইতে মসজিদে আকসা (বাইতুল মোকাদ্দাস) পর্যন্ত পরিভ্রমণ করাইয়াছেন। ইহার মধ্যে তাহাকে অসংখ্য নিদর্শনাবলী দেখান হইয়াছে।
শবে মেরাজ কবে সংঘটিত হয়?
একজন মুমিনকে যেসব অদৃশ্য সত্যের প্রতি ঈমান আনতে হয়। মেরাজে নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (স.)-কে তা স্বচক্ষে দেখানো হয়েছে। তবে ঠিক কোন মাস বা তারিখে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল তা কোনো হাদিসে বর্ণিত হয়নি।
রাসূলুল্লাহ (স.) একটি হাদিসেও মেরাজের তারিখ বর্ণনা করেননি। সাহাবীগণও (স.)কে মেরাজের তারিখ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেননি। এর প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননি। পরবর্তী যুগের তাবেঈগণও মিরাজের তারিখ সম্পর্কে কোনো আলোচনা করেননি। মেরাজের রাতের শিক্ষাগুলো ছিল তাদের কাছে মুখ্য।
পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিসগণ ও ঐতিহাসিকগণ যখন এর তারিখ নিয়ে আলোচনা করে তারা এর তারিখের বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি। এ বিষয়ে প্রায় ২০টি মতো রয়েছে। তার কারণ হলো, এ রাতটি সাহাবীদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ রাত্রি হিসেবে পরিচিত ছিল না।
তবে রজব মাসের ২৭ তারিখের যে মতটি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। সেটি তাবেঈ ও পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণের অনেকগুলো মতের থেকে একটি প্রসিদ্ধ মত।
আরো পড়ুনঃ
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন | এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
তারাবির নামাজের নিয়ম | রোজার নিয়ত সমূহ দোয়া
আল্লাহ ২ ধরনের লোকদের ক্ষমা করবেন না | শবে বরাতের রাত্রে
শবে মেরাজের রাত্রে মহানবী (স.) কি পেয়েছেন?
মহানবী (স.) মেরাজ থেকে ফেরার সময় আল্লাহতায়ালা তার একনিষ্ঠ ইবাদত ও আনুগত্য হিসেবে। মু’মিনদের মেরাজস্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রদান করেন। আর পরবর্তী সময়ে তথা মদিনায় হিজরতের পর ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে গেলে, তা পরিচালনার জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন হবে। তার প্রতি নির্দেশ করত আল্লাহ নীতিমালা পেশ করেন। সেই মৌলিক নীতিগুলোর ওপর সমষ্টিগতভাবে মানবজীবনের মূলভিত্তি গড়ে তোলাই ইসলামের আসল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩-২৭)।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়া মেরাজ উপলক্ষে আল্লাহর নিকট থেকে আরও দুটি উপহার পাওয়া গেল। একটি হচ্ছে সূরা বা কারার শেষ আয়াত সমষ্টি। যাতে ইসলামের মৌল আকিদাগুলো এবং ঈমানের পূর্ণতার বিষয় বিবৃত করার পর। এই মর্মে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, মুসিবতের দিন এখন সমাপ্ত-প্রায়।
দ্বিতীয় হচ্ছে এই সুসংবাদ যে, উম্মতে মুহাম্মদীর ভিতর যারা অন্তত শিরক থেকে বেঁচে থাকবে, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। (রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন)।
শবে মেরাজের নামাজ কত রাকাত?
আমাদের দেশের কোনো, কোনো এলাকার মসজিদে শবে মেরাজের ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এমনকি এই নামাজ শেষে আবার রামাদানের মতো, বিতরের নামাজকে ও জামাতের সাথে আদায় করা হয়। রজব মাসের কোনো রাতের বিশেষ ফজিলতের কোনো বর্ণনা নেই। মেরাজের রাতের ফজিলত সম্পর্কে যে কয়টি হাদিস আমাদের সমাজে চালু আছে, তার প্রায় সবই মুহাদ্দিসগণের বিচারে জাল ও বানোয়াট।
মেরাজের রাত নিয়ে এরূপ বাড়াবাড়ি এবং বিশেষ, বিশেষ ইবাদতের প্রচলন। নিঃসন্দেহে দীনের মধ্যে নতুনত্ব আরোপ তথা বিদআত। সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে আমল করা সকল মুসলিমের কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে কুরআন-হাদিস বোঝার তাওফিক দান করুন।
মোট কথা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়া, শবে মেরাজের রাত্রে ২, ৪,১২,২০ রাকাত নামাজ পড়তে হবে। এমন কোনো হাদিস নেই।
আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছে মতে, নফল ইবাদত করতে পারেন। ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে পারেন। যত রাকাত পড়তে পারেন, আপনার ইচ্ছে মতো। আপনি চাইলে কুরআন তেলোয়াত করতে পারেন।
শবে মেরাজের রোজা কয়টি?
মেরাজের দিন রোজা রাখতে হবে, এমন কোনো সহি হাদিস পাওয়া যায় নাই। আমাদের সমাজের মানুষ গুলো মেরাজের দিন রোজা রাখে। এটা ঠিক নয়। আমরা মহানবী (স.) এর উম্মত। তিনি যা করেছেন, ঠিক আমরা ও তাই করবো। কিন্তু মহানবী ( স.) মেরাজের দিন রোজা রাখতে বলেন নাই। আল্লাহ সবাইকে বুঝবার তৌফিক দান করুক।
রোজা যদি আপনার রাখতে ইচ্ছে করে, তাহলে আপনি অনন্য দিন অনুযায়ী নফল রোজা রাখতে পারেন। তবে শবে মেরাজের দিন অনুযায়ী রোজা রাখা ঠিক হবে না।
২০২২ সালের শবে মেরাজ কত তারিখে?
অনেকের জানে না ২০২২ সালের শবে মেরাজ কত তারিখে। তাই তারিখটি উল্লেখ করলাম। শবে মেরাজ ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত।
সর্বশেষ কথা
রজব বরকতময় একটি মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়কে রাসূল সা: রমজানের প্রস্তুতি মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রজব মাসকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বেশি বেশি নফল আমল করা প্রয়োজন। বেশি বেশি নফল রোজা, নফল নামাজসহ অন্যান্য নেককর্মের প্রতি মনোনিবেশ করা বেশি দরকার।
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার জানা দরকার যে, মেরাজ উপলক্ষে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো আমল নেই। রাসূল সা: রজব মাসে, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ও শাবানা ওবাল্লিগনা রামাজান’ এই দোয়া বেশি, বেশি পাঠ করতেন।